দেশে গুপ্ত স্বৈরাচারের শঙ্কা তারেক রহমান

 

দেশে গুপ্ত স্বৈরাচারের শঙ্কা : তারেক রহমান

দেশে গোপন স্বৈরতন্ত্রের আভাস : তারেক রহমান

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আগামী দিনে দেশে গুপ্ত স্বৈরাচারের আবির্ভাব হতে পারে। সেই স্বৈরাচার থেকে জনগণকে রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। এজন্য বিএনপির প্রতিটি নেতা-কর্মীকে ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে এবং দেশ গঠনের কাজে অংশ নিতে হবে। তার ভাষায়, এর কোনো বিকল্প নেই—এটাই হতে হবে আমাদের আগামী দিনের প্রতিজ্ঞা ও শপথ।


তিনি আরও বলেন, জনগণই সব ক্ষমতার উৎস। তাই জনগণকে সঙ্গে রাখতে হবে, তাদের মত ও প্রত্যাশাকে গুরুত্ব দিতে হবে। জনগণের সঙ্গে ভালো আচরণ করতে হবে এবং তাদের আশা পূরণে কাজ করতে হবে।

তারেক রহমান স্পষ্ট করেন, বিএনপির লক্ষ্য একটাই—“সবার আগে বাংলাদেশ।” দেশের স্বার্থ যেখানে, সেখানেই থাকবে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।

গতকাল বিকেলে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমনের সভাপতিত্বে সম্মেলনে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। এ ছাড়া দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাজি আমিনুর রশীদ ইয়াছিন, মনিরুল হক চৌধুরী, কুমিল্লা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মো. মোস্তাক মিয়া, কুমিল্লা মহানগরী বিএনপি সভাপতি উৎবাতুল বারী আবু, সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ মোল্লা টিপু প্রমুখ বক্তব্য দেন।

২ সহস্রাধিক কাউন্সিলর, ডেলিগেট ও দলের অঙ্গসংগঠনের হাজার হাজার নেতা-কর্মী এবং সমর্থক এতে উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে আহ্বায়ক জাকারিয়া তাহের সুমনকে সভাপতি ও সদস্যসচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ওয়াসিমকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘বক্তব্য অনেক হয়েছে। এখন আমাদের অনেক কাজ করতে হবে। আজ আমাদের একটি শপথ নিতে হবে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে আমাদের দেশ গড়তে হবে। দেশের সব গণতন্ত্রকামী রাজনৈতিক সমমনা দলকে নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে।’ 

তারেক রহমান বলেন, ‘গত ১৬ বছর আমরা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছি। আমাদের নেতা-কর্মীরা গুম-খুনের শিকার হয়েছেন। বহু নেতা-কর্মীকে পঙ্গুত্ববরণ করতে হয়েছে। স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। এখন আমাদের কাজ হচ্ছে দেশ পুনর্গঠন। দেশ যদি জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী পুনর্গঠন করতে হয়, তাহলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’ আপনারা ঐক্যবদ্ধ আছেন বলেই এত সুন্দর একটি সম্মেলন সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করেন তিনি।

দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘দেশটি হচ্ছে আপনার আমার সবার ঘর। এ ঘরে ডাকাত পড়েছিল গত ১৬ বছর। এ দেশ গঠন করতে হবে। দেশ গঠনে আসল শক্তি জনগণ। তাই জনগণের কাছে আমাদের যেতে হবে। দুই-তিন জনের টিম গঠন করে জনগণের দ্বারে দ্বারে যেতে হবে। সবার কাছে ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে ভোট চাইতে হবে। আমরা কীভাবে দেশ গঠন করব, কীভাবে শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলব, কীভাবে শান্তিশৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করব, কীভাবে উন্নয়ন করব সে বিষয়গুলো জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। আমাদের একটি লক্ষ্য হবে ঐক্যবদ্ধ জনগণ এবং জনগণকে নিয়ে দেশ গঠন।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা বিএনপি নেতা-কর্মীদের প্রতি আমার আহ্বান—আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কেবল নিজেদের নয়, গণতন্ত্রমনা সব শক্তিকেও একত্রিত করতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর পর এমন একটি প্রত্যাশিত দিন এসেছে, যেটির জন্য আমরা অপেক্ষায় ছিলাম। তিনি উল্লেখ করেন, সুখের দিনে মানুষ অতীত ভুলে যায়, তবে যেন আমরা বিস্মৃত না হই। তার দাবি, এ দেশ থেকে ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা লোপাট হয়েছে, আর বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে নেওয়া ঋণ দিয়ে অন্তত ৪০টি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা সম্ভব হতো। বর্তমানে ব্যাংকিং খাত ৫ লাখ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের বোঝা বহন করছে। তার ভাষায়, আওয়ামী লীগের ইতিহাস আসলে লুটপাটের ইতিহাস। তিনি আরও অভিযোগ করেন, জুলাই অভ্যুত্থানে ১ হাজার ৪০০ মানুষ নিহত হয়েছেন, হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালিয়ে মানুষ হত্যা করা হয়েছে, এবং ২০ হাজার মানুষ পঙ্গু হয়ে গেছে। এসব ঘটনা যেন জাতি ভুলে না যায়, সে আহ্বান জানান তিনি।

বরকত উল্লাহ বুলু বলেন, যারা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ অস্বীকার করে কিংবা তার চেতনা মানতে চায় না, তাদের বাংলাদেশের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের কোনো অধিকার নেই। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ‘পিআর’ কী বোঝায় তা জানে না। মানুষ ভোট দেয় একজনকে, অথচ প্রতিনিধি হয়ে যায় অন্যজন। তার মতে, ভোট শুধু প্রতীকের জন্য নয়, এটি ভোটার ও নেতার মধ্যে একটি আত্মিক বন্ধনের প্রকাশ।



২০০৯ সালের ২৪ নভেম্বর কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে বেগম রাবেয়া চৌধুরী সভাপতি, আমিন উর রশিদ ইয়াছিন সাধারণ সম্পাদক এবং মো. মোস্তাক মিয়া সাংগঠনিক সম্পাদক নির্বাচিত হন। জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনের আওতাধীন ১০ উপজেলা, চার পৌরসভা, ১০৭ ইউনিয়ন ও ৯৯৯ ওয়ার্ডে সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি ও জেলা কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।








No comments

Powered by Blogger.