৪৮ জেলায় ৪৩৫ স্থানে হত্যাকাণ্ড চালায় পুলিশ-যুবলীগ : চিফ প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় রাজধানী ঢাকাসহ দেশের ৪৮ জেলার ৪৩৫টি স্থানে পুলিশ ও যুবলীগের সদস্যরা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, ওই সময় নারী, শিশু, তরুণসহ সাধারণ মানুষকে গুলি করে হত্যা করা হয়।
সোমবার (১৩ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে করা মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের সময় তিনি এসব তথ্য দেন।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের সময় বাংলাদেশে ব্যাপক মাত্রায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এ ধরনের অপরাধের শর্ত হলো বেসামরিক নাগরিকদের ওপর পদ্ধতিগত ও বিস্তৃত আক্রমণ— যা সে সময় ঘটেছে। “দেশজুড়ে একই রকম হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে, যা ছিল ওয়াইড স্প্রেড ও সিস্টেম্যাটিক,” বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকা। প্রতিপক্ষকে দমন করে একদলীয় শাসন কায়েম করা এবং নিজের পরিবারকে দেবতার আসনে বসানোর চিন্তা থেকেই এই সহিংসতা সংগঠিত হয়।”
তাজুল ইসলাম জানান, “এই হামলাগুলো বিচ্ছিন্ন ছিল না। পরিকল্পিতভাবে সারা দেশে একই পদ্ধতিতে বারবার অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এতে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন, ১৪ শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন।”
তিনি যুক্তি দেন, “রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও বাহিনী ব্যবহার করে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার আওতায় এসব অভিযান পরিচালিত হয়েছে। সাক্ষীদের জবানবন্দি ও প্রমাণাদি বিশ্লেষণ করে আমরা দেখিয়েছি—আক্রমণগুলো ছিল বিস্তৃত এবং সংগঠিত।”
যুক্তিতর্ক চলাকালে গত বছরের ৫ আগস্ট গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে পুলিশের গুলিতে নিহত কলেজছাত্র হৃদয়কে নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্র আদালতে প্রদর্শন করা হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, বিজয় মিছিলে অংশ নেওয়ার পর পুলিশ হৃদয়কে ধরে পিটিয়ে গুলি করে হত্যা করে এবং পরে তার মরদেহ নদীতে ফেলে দেয়।
তাজুল ইসলাম বলেন, “এই ঘটনার দায় স্বীকার করেছে কনস্টেবল আকরাম। সাক্ষ্য ও ভিডিও প্রমাণ প্রমাণ করে, এই হত্যাকাণ্ডগুলো ছিল পরিকল্পিত ও রাষ্ট্রীয় সহযোগিতায় সংঘটিত।”
যুক্তিতর্ক আংশিক শেষ হওয়ায় শুনানি মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।
এর আগে, ৮ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল ১২ অক্টোবর যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের তারিখ নির্ধারণ করে। সে অনুযায়ী রোববার সকালে প্রসিকিউশন যুক্তিতর্ক শুরু করে।
মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজন আসামি রয়েছেন—সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। পরে মামুন রাজসাক্ষী হিসেবে হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেন।
সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হওয়ায় এখন যুক্তিতর্কের পর মামলাটি রায়ের পর্যায়ে যাবে বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউশন।


No comments