আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে - প্রধান উপদেষ্টা


আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে - প্রধান উপদেষ্টা 

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, নির্বাচন আয়োজনের পাশাপাশি তার সরকার স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় ধারাবাহিক সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

গতকাল শুক্রবার (স্থানীয় সময়) জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে বাংলায় দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

ড. ইউনূস বলেন, “আমরা জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছি, পাশাপাশি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই সংস্কারের মাধ্যমে ক্ষমতার ভারসাম্যপূর্ণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো গড়ে তুলছি। যাতে ভবিষ্যতে আর কোনো স্বৈরশাসনের সুযোগ না থাকে।”

তিনি জানান, শাসনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, নির্বাচন, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা, দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম ও নারী অধিকারের মতো খাতে সংস্কারের জন্য ইতিমধ্যেই ১১টি স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এসব কমিশনের সুপারিশ টেকসইভাবে বাস্তবায়নের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কাজ করছে।

ভেঙে পড়া রাষ্ট্রকাঠামো পুনর্গঠন ও জনগণের প্রত্যাশা পূরণে সহজ পথ নয়, বরং কঠিন পথ—অন্তর্ভুক্তিমূলক সংস্কার বেছে নেওয়ার কথাও তিনি উল্লেখ করেন।

মানবাধিকার সুরক্ষায় নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, স্বৈরশাসক কর্তৃক সংঘটিত নৃশংসতা উদ্ঘাটনে জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবং তাদের সুপারিশ জাতীয় সংস্কার পরিকল্পনায় যুক্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি গুম ও নির্যাতনবিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেনশনে যোগ দেওয়ার পর তা বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন চলছে।

অর্থনীতিকে দুর্নীতি ও অপচয়ের হাত থেকে মুক্ত করতে নেওয়া কঠিন সিদ্ধান্তের কথাও তুলে ধরেন তিনি। তার ভাষায়, “অতীতে উন্নয়নের নামে ব্যাপক দুর্নীতি হয়েছে। আমরা এখন সেই চক্র ভাঙছি, যাতে আর কখনো জনগণের সম্পদ আত্মসাতের অজুহাত হিসেবে উন্নয়নকে ব্যবহার করা না যায়।”

তরুণ প্রজন্মকে সমাজ পরিবর্তনের চালিকাশক্তি আখ্যা দিয়ে ড. ইউনূস জানান, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, নবায়নযোগ্য শক্তি ও পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তিতে দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।

আঞ্চলিক সহযোগিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহারে ন্যায্যতা ও সহমর্মিতা অপরিহার্য। তাই দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ জাতিসংঘের পানি সংক্রান্ত কনভেনশনে যোগ দিয়েছে।”

রোহিঙ্গা সংকট প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা উল্লেখ করেন, এটি এখন শুধু দ্বিপাক্ষিক নয়, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার বিষয়। রাখাইনে রোহিঙ্গাদের পূর্ণ অধিকার ও নাগরিকত্ব নিশ্চিত করতে সব জাতিসত্তার অংশগ্রহণে রাজনৈতিক সমাধান জরুরি।

ভাষণের শেষাংশে ড. ইউনূস বলেন, “আমার জনগণ দেখিয়ে দিয়েছে, অন্যায়ের অবসান অবশ্যম্ভাবী। পরিবর্তন যেমন সম্ভব, তেমনি অপরিহার্য। আজকের পৃথিবীতে কোনো সংকটই একক কোনো দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি গোটা বিশ্বের নিরাপত্তাকে প্রভাবিত করে।

No comments

Powered by Blogger.