আল আকসা যেভাবে ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠল

 

আল আকসা মসজিদ: উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু ও ইতিহাস  ইসরায়েলের ওপর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের আকস্মিক হামলার নামকরণ হয়েছিল “অপারেশন আল আকসা স্টর্ম”। জেরুসালেমের আল আকসা মসজিদ বহুদিন ধরেই ইহুদি ও মুসলমানদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনার কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত।  বর্তমানে এটি জর্ডানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং দেশটির একটি ওয়াকফ ট্রাস্ট মসজিদটি পরিচালনা করে। তবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস মনে করেন—ইসরায়েলি আগ্রাসন, বিশেষ করে আল আকসার মতো ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে, বর্তমান অস্থিরতার অন্যতম কারণ। যদিও ইসরায়েল সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।  চলতি বছর উত্তেজনা চরমে পৌঁছে যায় যখন রমজান মাস ও ইহুদিদের ধর্মীয় উৎসব পাসওভারকে ঘিরে ইসরায়েলি পুলিশ মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে এবং নামাজরত মুসল্লিদের সেখান থেকে সরানোর চেষ্টা করে। পুলিশের দাবি, “সহিংস” বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করতেই তারা অভিযান চালায়। তবে এর প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তিনি অঞ্চলসহ মুসলিম বিশ্বে তীব্র ক্ষোভের বিস্তার ঘটে।  আল আকসার ধর্মীয় গুরুত্ব  ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, ৬২০ খ্রিস্টাব্দে নবী মুহাম্মদ (সা.) ইসরা ও মিরাজের রাতে মক্কা থেকে আল আকসা হয়ে আসমানে আরোহন করেছিলেন। কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত আছে, ইব্রাহিম (আঃ), দাউদ (আঃ), সুলায়মান (আঃ), ইলিয়াস (আঃ) ও ঈসা (আঃ)-সহ বহু নবী এখানে প্রার্থনা করেছেন।  পুরাতন জেরুসালেমের কেন্দ্রস্থলের একটি পাহাড়চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছে এই পবিত্র স্থান। মুসলমানরা একে আল হারাম আল শরীফ বা নোবেল স্যাঙ্কচুয়ারি নামে জানে। প্রায় ১৪ হেক্টর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত প্রাঙ্গণটিতে দুটি মূল স্থাপনা রয়েছে—  ডোম অফ দ্য রক (সোনালী গম্বুজবিশিষ্ট স্থাপনা)  আল আকসা মসজিদ (কিবলি মসজিদ), যা অষ্টম শতকে নির্মিত  অন্যদিকে ইহুদিরা এ স্থানকে টেম্পল মাউন্ট বা হার হা বায়িত নামে জানে। তাদের বিশ্বাস, রাজা সলোমন এখানে প্রায় তিন হাজার বছর আগে প্রথম উপাসনালয় নির্মাণ করেছিলেন। ইতিহাস অনুযায়ী, প্রথমে ব্যাবিলনীয়রা এবং পরে ৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমানরা সেই মন্দির ধ্বংস করে। এর শেষ নিদর্শন হলো পশ্চিম প্রাচীর (ওয়েস্টার্ন ওয়াল), যা আজও ইহুদিদের প্রার্থনার স্থান।  আধুনিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট  ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েল পূর্ব জেরুসালেমসহ টেম্পল মাউন্ট প্রাঙ্গণ দখল করে নেয়। যদিও আন্তর্জাতিকভাবে এ দখলদারিত্ব স্বীকৃত হয়নি। বর্তমানে পূর্ব জেরুসালেম ইসরায়েলের দখলে থাকলেও, আল আকসার প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ জর্ডানের ওয়াকফ কর্তৃপক্ষের হাতে। জর্ডানের বাদশাহ মসজিদের আনুষ্ঠানিক তত্ত্বাবধায়ক।  অমুসলিম দর্শনার্থীরা মসজিদ কমপ্লেক্সে প্রবেশ করতে পারে, তবে কেবল মুসলমানরাই এখানে নামাজ আদায় করতে পারেন। ইসরায়েলি সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে ইহুদি ও খ্রিস্টানরা নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুযায়ী পর্যটক হিসেবে প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করতে পারেন।  সহিংসতা ও সংঘর্ষ  ২০০০ সালে ইসরায়েলের তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা আরিয়েল শ্যারন টেম্পল মাউন্ট সফর করলে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয় এবং দ্বিতীয় ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদা বা আল আকসা ইন্তিফাদার সূচনা হয়। এতে তিন হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি ও প্রায় এক হাজার ইসরায়েলি নিহত হন।  ২০২১ সালের মে মাসেও একই প্রাঙ্গণকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়। ইসরায়েলি পুলিশের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সংঘাতে শত শত মানুষ আহত হন। এর প্রতিক্রিয়ায় হামাস গাজা থেকে রকেট নিক্ষেপ করে, যার জবাবে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১১ দিন ধরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলে।  ২০২৩ সালে আবারও উত্তেজনা ছড়ায়। রমজান মাসে ইসরায়েলি পুলিশ আল আকসায় প্রবেশ করে দাবি করে যে বিক্ষোভকারীরা মসজিদ অবরোধ করে রেখেছে। অন্যদিকে ওয়াকফ কর্তৃপক্ষ অভিযোগ তোলে, পুলিশ মুসলমানদের উপাসনালয়ের পবিত্রতা লঙ্ঘন করেছে।  স্থিতাবস্থা বনাম উত্তেজনা  ইসরায়েলি সরকার দাবি করে, সব ধর্মের মানুষ যেন অবাধে উপাসনালয় পরিদর্শন করতে পারে তা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার “স্থিতাবস্থা বজায় রাখার” কথা বলেছেন। তবে বাস্তবে আল আকসা মসজিদকে ঘিরে ইসরায়েলি অভিযান, পুলিশি হস্তক্ষেপ ও চরমপন্থিদের উসকানিতে পরিস্থিতি বারবার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে।  ফলে আল আকসা শুধু ধর্মীয় নয়, রাজনৈতিকভাবেও ফিলিস্তিনি-ইসরায়েলি সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

আল আকসা মসজিদ: উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু ও ইতিহাস

ইসরায়েলের ওপর ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের আকস্মিক হামলার নামকরণ হয়েছিল “অপারেশন আল আকসা স্টর্ম”। জেরুসালেমের আল আকসা মসজিদ বহুদিন ধরেই ইহুদি ও মুসলমানদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনার কেন্দ্রস্থল হিসেবে পরিচিত।

বর্তমানে এটি জর্ডানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং দেশটির একটি ওয়াকফ ট্রাস্ট মসজিদটি পরিচালনা করে। তবে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস মনে করেন—ইসরায়েলি আগ্রাসন, বিশেষ করে আল আকসার মতো ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে, বর্তমান অস্থিরতার অন্যতম কারণ। যদিও ইসরায়েল সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।

চলতি বছর উত্তেজনা চরমে পৌঁছে যায় যখন রমজান মাস ও ইহুদিদের ধর্মীয় উৎসব পাসওভারকে ঘিরে ইসরায়েলি পুলিশ মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে এবং নামাজরত মুসল্লিদের সেখান থেকে সরানোর চেষ্টা করে। পুলিশের দাবি, “সহিংস” বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করতেই তারা অভিযান চালায়। তবে এর প্রতিক্রিয়ায় ফিলিস্তিনি অঞ্চলসহ মুসলিম বিশ্বে তীব্র ক্ষোভের বিস্তার ঘটে।


আল আকসার ধর্মীয় গুরুত্ব

ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, ৬২০ খ্রিস্টাব্দে নবী মুহাম্মদ (সা.) ইসরা ও মিরাজের রাতে মক্কা থেকে আল আকসা হয়ে আসমানে আরোহন করেছিলেন। কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত আছে, ইব্রাহিম (আঃ), দাউদ (আঃ), সুলায়মান (আঃ), ইলিয়াস (আঃ) ও ঈসা (আঃ)-সহ বহু নবী এখানে প্রার্থনা করেছেন।

পুরাতন জেরুসালেমের কেন্দ্রস্থলের একটি পাহাড়চূড়ায় দাঁড়িয়ে আছে এই পবিত্র স্থান। মুসলমানরা একে আল হারাম আল শরীফ বা নোবেল স্যাঙ্কচুয়ারি নামে জানে। প্রায় ১৪ হেক্টর জায়গাজুড়ে বিস্তৃত প্রাঙ্গণটিতে দুটি মূল স্থাপনা রয়েছে—

  • ডোম অফ দ্য রক (সোনালী গম্বুজবিশিষ্ট স্থাপনা)

  • আল আকসা মসজিদ (কিবলি মসজিদ), যা অষ্টম শতকে নির্মিত

অন্যদিকে ইহুদিরা এ স্থানকে টেম্পল মাউন্ট বা হার হা বায়িত নামে জানে। তাদের বিশ্বাস, রাজা সলোমন এখানে প্রায় তিন হাজার বছর আগে প্রথম উপাসনালয় নির্মাণ করেছিলেন। ইতিহাস অনুযায়ী, প্রথমে ব্যাবিলনীয়রা এবং পরে ৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমানরা সেই মন্দির ধ্বংস করে। এর শেষ নিদর্শন হলো পশ্চিম প্রাচীর (ওয়েস্টার্ন ওয়াল), যা আজও ইহুদিদের প্রার্থনার স্থান।


আধুনিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েল পূর্ব জেরুসালেমসহ টেম্পল মাউন্ট প্রাঙ্গণ দখল করে নেয়। যদিও আন্তর্জাতিকভাবে এ দখলদারিত্ব স্বীকৃত হয়নি। বর্তমানে পূর্ব জেরুসালেম ইসরায়েলের দখলে থাকলেও, আল আকসার প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ জর্ডানের ওয়াকফ কর্তৃপক্ষের হাতে। জর্ডানের বাদশাহ মসজিদের আনুষ্ঠানিক তত্ত্বাবধায়ক।

অমুসলিম দর্শনার্থীরা মসজিদ কমপ্লেক্সে প্রবেশ করতে পারে, তবে কেবল মুসলমানরাই এখানে নামাজ আদায় করতে পারেন। ইসরায়েলি সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে ইহুদি ও খ্রিস্টানরা নির্দিষ্ট সময়সূচি অনুযায়ী পর্যটক হিসেবে প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করতে পারেন।


সহিংসতা ও সংঘর্ষ

২০০০ সালে ইসরায়েলের তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা আরিয়েল শ্যারন টেম্পল মাউন্ট সফর করলে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয় এবং দ্বিতীয় ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদা বা আল আকসা ইন্তিফাদার সূচনা হয়। এতে তিন হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি ও প্রায় এক হাজার ইসরায়েলি নিহত হন।

২০২১ সালের মে মাসেও একই প্রাঙ্গণকে কেন্দ্র করে বড় ধরনের সংঘর্ষ হয়। ইসরায়েলি পুলিশের সঙ্গে ফিলিস্তিনিদের সংঘাতে শত শত মানুষ আহত হন। এর প্রতিক্রিয়ায় হামাস গাজা থেকে রকেট নিক্ষেপ করে, যার জবাবে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ১১ দিন ধরে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ চলে।

২০২৩ সালে আবারও উত্তেজনা ছড়ায়। রমজান মাসে ইসরায়েলি পুলিশ আল আকসায় প্রবেশ করে দাবি করে যে বিক্ষোভকারীরা মসজিদ অবরোধ করে রেখেছে। অন্যদিকে ওয়াকফ কর্তৃপক্ষ অভিযোগ তোলে, পুলিশ মুসলমানদের উপাসনালয়ের পবিত্রতা লঙ্ঘন করেছে।


স্থিতাবস্থা বনাম উত্তেজনা

ইসরায়েলি সরকার দাবি করে, সব ধর্মের মানুষ যেন অবাধে উপাসনালয় পরিদর্শন করতে পারে তা নিশ্চিত করাই তাদের লক্ষ্য। প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার “স্থিতাবস্থা বজায় রাখার” কথা বলেছেন। তবে বাস্তবে আল আকসা মসজিদকে ঘিরে ইসরায়েলি অভিযান, পুলিশি হস্তক্ষেপ ও চরমপন্থিদের উসকানিতে পরিস্থিতি বারবার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠে।

ফলে আল আকসা শুধু ধর্মীয় নয়, রাজনৈতিকভাবেও ফিলিস্তিনি-ইসরায়েলি সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.