হৃৎপিণ্ডের টুকিটাকি

 

হৃদপিণ্ড ও হৃদরোগ

সৃষ্টিকর্তার এক অনন্য সৃষ্টি হলো আমাদের হৃদপিণ্ড। মানুষের জীবদ্দশায় এ অঙ্গটি প্রায় ২৬০০ মিলিয়ন বার স্পন্দিত হয়ে দেহের প্রতিটি অঙ্গকে সজীব রাখে। এর কাছ থেকেই আমরা উদারতার শিক্ষা নিতে পারি—কারণ এটি বিরামহীনভাবে কাজ করে আমাদের জীবনধারা সচল রাখে।

তবে অনিয়মিত ও বিশৃঙ্খল জীবনযাপনের কারণে এই অঙ্গটি বিকল হতে পারে, যা জীবনে এক ভয়াবহ অভিশাপ ডেকে আনে।


হৃদরোগ কী?

হৃদপিণ্ডের যেকোনো অংশে সমস্যা দেখা দিলে তাকে এককথায় হৃদরোগ (Heart Disease) বলা হয়।


সাধারণ হৃদরোগের ধরন

মানুষের দেহে নানারকম হৃদরোগ হতে পারে। এর মধ্যে সবচেয়ে প্রচলিত হলো—

  • করোনারি আর্টারি রোগ

  • হার্ট অ্যাটাক

  • হার্ট ফেইলিউর

  • কার্ডিওমায়োপ্যাথি

  • বাতজ্বরজনিত হৃদরোগ

  • হার্ট ব্লক

  • জন্মগত হৃদত্রুটি


হৃদরোগের ঝুঁকির কারণ

  • উচ্চ রক্তচাপ

  • ডায়াবেটিস
  • ধূমপান ও তামাকজাতীয় দ্রব্য সেবন
  • মদ্যপান
  • অতিরিক্ত মানসিক চাপ
  • কর্মহীনতা ও ব্যায়ামের অভাব
  • অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস (জাঙ্ক ফুড, তেল-চর্বিযুক্ত খাবার, রেডমিট বেশি খাওয়া, ফল-সবজি কম খাওয়া ইত্যাদি)
  1. বংশগত কারণ

  2. রক্তে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল


হৃদরোগের লক্ষণ

  • হঠাৎ তীব্র বুকব্যথা, যা গলা বা বাম হাতে ছড়িয়ে পড়তে পারে
  • শ্বাসকষ্ট
  • বুক ধড়ফড় করা
  • অস্বাভাবিক ঘাম
  • মাথা ঘোরা ও অজ্ঞান হয়ে যাওয়া
  • পায়ে পানি জমা
  • অস্বাভাবিক হৃদশব্দ
  • হৃদস্পন্দন বা রক্তচাপের অস্বাভাবিক ওঠানামা

তাৎক্ষণিক করণীয়

উপরের যেকোনো লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে দ্রুত বিশেষজ্ঞ হৃদরোগ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে এবং প্রয়োজনে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।


হৃদরোগের আধুনিক চিকিৎসা

বর্তমানে বাংলাদেশেই হৃদরোগের জন্য নানা আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি চালু রয়েছে। যেমন—

  • করোনারি অ্যাঞ্জিওগ্রাম

  • ই.টি.টি. (Exercise Tolerance Test)

  • কালার ডপলার ইকোকার্ডিওগ্রাফি

  • হলটার মনিটরিং

  • পেসমেকার প্রতিস্থাপন

  • করোনারি স্টেন্টিং

  • বিভিন্ন কার্ডিওভাসকুলার সার্জারি

  • মাত্র ২ ইঞ্চি ছিদ্র দিয়ে পাঁজর না কেটে হার্টের অপারেশন (MICS)


হৃদরোগ প্রতিরোধে করণীয়

  • অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে

  • শাকসবজি ও ফলমূল বেশি খেতে হবে

  • প্রতিদিন ১৫–৩০ মিনিট নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে

  • অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত ও শর্করাযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে

  • মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে

  • উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে


শেষকথা

মানুষ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি। প্রত্যেকেই দীর্ঘ ও সুস্থ জীবন কামনা করে। সুস্থভাবে দীর্ঘায়ু লাভের অন্যতম শর্ত হলো একটি সুস্থ হৃদপিণ্ড। বর্তমানে শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও হৃদরোগের প্রকোপ দ্রুত বাড়ছে। তবে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, সচেতনতা এবং নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমে এর অনেকটাই প্রতিরোধ করা সম্ভব। কারণ— সুস্থতার ভেতরেই লুকিয়ে আছে জীবনের প্রকৃত সুখ।

লেখক :
সিনিয়র ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট
ইউনিভার্সেল কার্ডিয়াক হাসপাতাল, ঢাকা
বিভাগীয় প্রধান, কার্ডিওলজি
ইউনিভার্সেল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা

No comments

Powered by Blogger.