যে সাত ধরনের মানুষ আল্লাহর প্রিয়
মানুষের জীবনপথে অর্জন আর সাফল্যের তালিকায় আমরা সাধারণত ধন-সম্পদ, প্রভাবশালী পদ, ক্ষমতা কিংবা খ্যাতিকেই মূল্যায়নের মানদণ্ড হিসেবে দেখি। কিন্তু আসলেই কি এগুলোই মানবজীবনের সেরা সাফল্য? ইতিহাস বলে ক্ষমতাধর সম্রাট থেকে বিলিয়ন ডলারের ধনকুবের—সবাই একদিন মাটির নিচে বিলীন হয়ে গেছে। সঙ্গে চলে গেছে তাদের আভিজাত্য, প্রভাব ও ভোগবিলাস। কিন্তু মানুষের জন্য এমন একদিন অপেক্ষা করছে; যেদিন পৃথিবীর সব কীর্তি অর্থহীন হয়ে যাবে।সেটি হলো কিয়ামতের দিন।
কোরআনে কিয়ামতের দিনকে চিত্রিত করা হয়েছে এক ভয়ের, আতঙ্কের ও অসহায়ত্বের দিন হিসেবে। সেদিন সূর্য মানুষের মাথার কাছাকাছি অবস্থান করবে, যার তীব্র উত্তাপে মানুষ ঘামে ভিজে থাকবে। কোনো ছায়া থাকবে না, কোনো আশ্রয় থাকবে না—শুধু আল্লাহর আরশের ছায়া ছাড়া।
পবিত্র কোরআনে এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে:
“সেদিন ধন-সম্পদ বা সন্তান কোনো কাজে আসবে না। শুধু সেই ব্যক্তি ছাড়া, যিনি আল্লাহর কাছে কল্যাণময় অন্তর নিয়ে হাজির হবেন।”
(সুরা আশ-শুআরা, আয়াত ৮৮-৮৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.) সেই বিশেষ সৌভাগ্যবান মানুষের কথা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন, যাদের আল্লাহ কিয়ামতের দিনে আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। তিনি বলেন, “সাত শ্রেণির মানুষকে আল্লাহ তাআলা কিয়ামতের দিন তাঁর আরশের ছায়ায় রাখবেন; সেদিন আল্লাহর ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না।”
’ (বুখারি, হাদিস : ৬৬০)
আরও পড়ুন :প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে
কারা সেই সাত শ্রেণির মানুষ
১. ন্যায়পরায়ণ শাসক : শাসনক্ষমতা মানুষের জন্য এক বিশাল পরীক্ষা। ইতিহাসে দেখা যায়, বেশির ভাগ ক্ষমতাধর ব্যক্তিই অন্যায়ের পথে হেঁটেছেন। কিন্তু যাঁরা আল্লাহভীরু থেকে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেছেন, তাঁরা আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা। আজকের সমাজব্যবস্থায় হোক রাষ্ট্রপ্রধান বা ক্ষুদ্র প্রতিষ্ঠানের কর্তা; যিনি ক্ষমতার আসনে থেকেও ন্যায়ের মানদণ্ডে অটল থাকবেন, তাঁর জন্যই রয়েছে আল্লাহর আরশের ছায়া।
২. যে যুবক আল্লাহর ইবাদতে বেড়ে ওঠে : যৌবন হলো জীবনের সবচেয়ে উচ্ছ্বাসময় সময়।
আল্লাহর ইবাদতে লালিত হয়, দুনিয়ার ভোগবাদী সংস্কৃতিকে অস্বীকার করে আল্লাহর ইচ্ছার কাছে নিজেকে সঁপে দেয়—সে হবে আরশের ছায়ার যোগ্য। মহানবী (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিনে মানুষের দুই পা সরবে না, যতক্ষণ না সে পাঁচটি বিষয়ে হিসাব দেয়—জীবন, যৌবন, সম্পদ, জ্ঞান ও আমল।’
(তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৬)
৩. যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে : মসজিদ হলো আল্লাহর ঘর। যে বান্দা মসজিদের প্রতি ভালোবাসা রাখে, প্রতিনিয়ত মসজিদে এসে নামাজ আদায় করে, তার অন্তর সর্বদা মসজিদের সঙ্গে বাঁধা থাকে।
৪. দুই ব্যক্তি, যারা আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবাসে : ভালোবাসার সম্পর্ক সাধারণত স্বার্থ, রক্তের সম্পর্ক বা পার্থিব কারণে হয়। কিন্তু যারা শুধু আল্লাহর জন্য একে অপরকে ভালোবাসে—তাদের সম্পর্ক অন্য যেকোনো বন্ধনের চেয়ে শক্তিশালী। এই ভালোবাসা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হলে কিয়ামতের দিন তা বান্দাকে আরশের ছায়ায় স্থান দেবে।
৫. যে মানুষকে কোনো সৌন্দর্যময় নারী ব্যভিচারে আহবান করলে সে বলে, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’ : পাপের আহবান যখন আসে আকর্ষণীয় আকারে, তখন তা প্রতিরোধ করাই প্রকৃত তাকওয়া। ইউসুফ (আ.)-এর ঘটনা এ ক্ষেত্রে বড় উদাহরণ। আজকের যুগে যখন অশ্লীলতা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে, তখন যে যুবক আল্লাহভীতির কারণে গুনাহ থেকে বিরত থাকে, সে আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয়ে যায়।
৬. যে গোপনে দান করে, এমনকি তার বাঁ হাতও জানে না ডান হাত কী দান করছে : দান-সদকা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য হলে তা মহান মর্যাদা পায়। কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তোমরা যদি প্রকাশ্যে সদকা দাও, তা ভালো; আর যদি তা গোপনে দিয়ে গরিবদের পৌঁছাও, তবে তা তোমাদের জন্য আরো উত্তম।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৭১)
৭. যে একান্তে আল্লাহকে স্মরণ করে চোখের অশ্রু ঝরায়
মানুষের ভিড়ে নয়, বরং একান্ত নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করার সময় হৃদয় কোমল হয় এবং চোখ ভিজে যায়। এই অশ্রু হলো ঈমানের জীবন্ত প্রমাণ। মহানবী (সা.) বলেছেন, দু’চোখকে আগুন স্পর্শ করবে না—যে চোখ আল্লাহভীতিতে কেঁদেছে। (তিরমিজি, হাদিস: ১৬৩৯)
আল্লাহ আমাদের সকলকে আমলের মাধ্যমে নিজেকে আরশের ছায়ায় আশ্রয় প্রাপ্তির যোগ্য হওয়ার তাওফিক দিন।
.png)

No comments