জাতিসংঘে নির্বাচনী রূপরেখা তুলে ধরবেন ড. ইউনূস

 জাতিসংঘে নির্বাচনী রূপরেখা তুলে ধরবেন ড. ইউনূস



জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে বাংলাদেশের নির্বাচনী রূপরেখা, সংস্কার কার্যক্রম ও ভবিষ্যৎ রূপরেখা বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি জানাবেন, আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হবে দেশের গণতন্ত্রের নতুন ভিত্তি স্থাপনের পথচিহ্ন।

নির্বাচনকে ঘিরে আন্তর্জাতিক আগ্রহ

কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, নিউইয়র্কে চলমান অধিবেশনের সাইডলাইন বৈঠকগুলোতে ড. ইউনূসের অংশগ্রহণ ও বক্তব্যের কারণে আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশের নির্বাচনী রূপরেখা প্রস্তুতি নিয়ে আগ্রহ বেড়েছে। নির্বাচন ছাড়াও আর্থিক সংস্কার, মানবিক সংকট মোকাবিলা ও বৈদেশিক সম্পর্ক জোরদারকরণ এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

মঙ্গলবার ম্যানহাটনের গ্র্যান্ড হায়াত হোটেলে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনকেন্দ্রিক নানা সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। তিনি বলেন, “রাজনৈতিক সহিংসতা ও আস্থাহীনতার পরিবেশে এই প্রস্তুতি সহজ ছিল না। তবে প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘে স্পষ্ট করে জানাবেন—আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হবে সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক।”

তিনি আরও বলেন, “এ নির্বাচন আর পিছাবে না। এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য ফাউন্ডেশনাল নির্বাচন হিসেবে কাজ করবে।”

বিশ্বনেতাদের সঙ্গে বৈঠক

অধিবেশনের দ্বিতীয় দিনে ড. ইউনূস একাধিক বিশ্বনেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তাদের মধ্যে ছিলেন—অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ, নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমা, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক ড. তেদরস আধানোম গেব্রিয়াসিস প্রমুখ। আলোচনায় উঠে আসে নির্বাচন, স্বাস্থ্য বীমা সম্প্রসারণ, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, ডিজিটাল উদ্ভাবন এবং রোহিঙ্গা সংকট।

প্যারিসের মেয়র অ্যানে হিদালগোর সঙ্গে আলাপকালে ইউনূস বলেন, “বাংলাদেশে দীর্ঘ অস্থিরতার পর এবার গণতন্ত্রের জন্য নতুন অধ্যায় সূচিত হচ্ছে।” এ সময় মেয়র হিদালগো তার নেতৃত্বকে মানবিকতার প্রতীক হিসেবে অভিহিত করেন।

দুর্নীতি ও পাচার অর্থ ফেরত আনার উদ্যোগ

বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গার সঙ্গে বৈঠকে ইউনূস উল্লেখ করেন, অতীত সরকার আমলে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। তিনি এ অর্থ ফেরত আনার জন্য আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চান। বিশ্বব্যাংক কারিগরি সহায়তার আশ্বাস দিয়ে জানিয়েছে, বাংলাদেশ চাইলে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করতে তারা প্রস্তুত।

এলডিসি উত্তরণে ডব্লিউটিওর সমর্থন

২০২৬ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তীর্ণ হবে। এ প্রেক্ষাপটে রপ্তানি খাতে ধাক্কা লাগার আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য ডব্লিউটিও মহাপরিচালক ড. নগোজি অকোনজো-ইওয়েলার সঙ্গে বৈঠকে ইউনূস সক্রিয় সহায়তা চান। অকোনজো-ইওয়েলা প্রতিশ্রুতি দেন যে বাংলাদেশকে তারা এ উত্তরণ প্রক্রিয়ায় পূর্ণ সমর্থন দেবে।

আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সম্মাননা

নিউইয়র্কে থেয়ারওয়ার্ল্ড আয়োজিত বার্ষিক শিক্ষা ডিনারে ইউনূসকে দেওয়া হয় ‘আনলক বিগ চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’। দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, সামাজিক ব্যবসা ও নারীর ক্ষমতায়নে তার অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এ সম্মাননা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন বলেন, “গ্রামীণ ব্যাংকের প্রভাব বিশ্ব ইতিহাসে অনন্য।”

ট্রাম্পসহ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠক

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে ইউনূস জানান, ফেব্রুয়ারিতেই বাংলাদেশে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তিনি ট্রাম্পকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণও জানিয়েছেন। এ ছাড়া স্পেনের রাজা ষষ্ঠ ফিলিপে, জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা, জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গেও তার মতবিনিময় হয়েছে।

বৈশ্বিক অর্থনীতি নিয়ে আহ্বান

জাতিসংঘ সদর দপ্তরে আয়োজিত একটি উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে ইউনূস বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানান টেকসই ও অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি গড়ে তুলতে। তিনি বলেন, “আমরা এমন একটি স্থিতিশীল বিশ্ব গড়তে চাই যেখানে কেউ পিছিয়ে থাকবে না।” এ জন্য তিনি পাঁচটি অগ্রাধিকার তুলে ধরেন, যা কার্যকর হলে বৈশ্বিক দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূরীকরণ সহজ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।


No comments

Powered by Blogger.