প্রতি ভোটের জন্য সময় ১৫ সেকেন্ড।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। ভোটগ্রহণ হবে আগামী ১৫ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। নির্বাচনকে ঘিরে পুরো ক্যাম্পাসে উৎসবমুখর পরিবেশ, তবে প্রশাসন সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে।

নির্বাচন কমিশন জানায়, ভোটার ও পদসংখ্যা অনুযায়ী একজন শিক্ষার্থীকে ভোট দিতে সর্বোচ্চ ১০ মিনিট সময় দেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট ৪০টি পদে ভোট দিতে হবে, অর্থাৎ গড়ে প্রতি ১৫ সেকেন্ডে এক ভোট দেওয়ার হিসাব করা হয়েছে।

এদিকে, ভোটগ্রহণের জন্য পাঁচটি অনুষদ ভবনকে প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করেছে নির্বাচন কমিশন। এসব ভবনে ১৪টি হলের নামে ১৪টি ভোটকেন্দ্র হবে। আগামীকাল রোববার প্রার্থী ও ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সবকিছু চূড়ান্ত করবে কমিশন।

শুধু কেন্দ্রীয় সংসদেই রয়েছে ২৬টি পদ, যেখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪১৫ জন প্রার্থী। অন্যদিকে, ১৪টি হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন আরও ৪৯৩ জন প্রার্থী। প্রতিটি হলে থাকবে ১৪টি করে পদ। ফলে নির্বাচনে প্রার্থীসংখ্যা যেমন বিপুল, তেমনি অংশগ্রহণকারী ভোটারের সংখ্যাও উল্লেখযোগ্য। মোট ২৭ হাজার ৫১৮ জন শিক্ষার্থী ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।

নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, এ ছাড়া নির্বাচন পরিচালনায় প্রতিটি অনুষদের ডিনকে রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হয়েছে। বিভাগের সভাপতিরা থাকবেন প্রিজাইডিং কর্মকর্তা। ভোটার তালিকায় যুক্ত থাকবে শিক্ষার্থীদের ছবি।

নির্বাচন কমিশন প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভোটগ্রহণ হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি অনুষদের পাঁচটি ভবনে। এই পাঁচ ভবনে থাকবে ১৪টি কেন্দ্র, যা প্রতিটি হলের নামে নামকরণ করা হবে। প্রতিটি ভবনে কক্ষের আয়তন অনুসারে ৬০ থেকে ৬৫টি ভোটকক্ষ রাখা হবে। সব মিলিয়ে প্রায় ৭০০টি বুথ স্থাপন করা হবে। প্রতিটি বুথে ৪০০-৫০০ শিক্ষার্থী ভোট দিতে পারবেন।

এদিকে, ডাকসু নির্বাচনের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে এবার প্রতিটি ব্যালট পেপারের জন্য আলাদা ব্যালট বাক্স রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় ব্যালট পেপারের সংখ্যা দাঁড়াবে ৫ থেকে ৬টি। ভোটের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে কিছু ব্যালট বাক্স স্বচ্ছ, আর কিছু ঘোলাটে রাখা হবে।

ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে গোপন ভোটকক্ষ ছাড়া বাকি সব জায়গায় থাকবে সিসিটিভি ক্যামেরা। পাশাপাশি প্রতিটি ভোটকেন্দ্রের সামনে থাকবে এলইডি স্ক্রিন, যাতে শিক্ষার্থীরা সরাসরি পরিস্থিতি দেখতে পারেন। এমনকি কমিশন চাইলে সিসিটিভি ফুটেজ সরাসরি সম্প্রচারও করতে পারে।

নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, সর্বোচ্চ গোপনীয়তার সঙ্গে ব্যালট পেপার ছাপানো হবে। পুরো প্রক্রিয়া চলবে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের উপস্থিতিতে।

দুর্গাপূজা ও শরৎকালীন ছুটির কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকলেও প্রার্থীরা প্রচারে থেমে নেই। তারা সক্রিয়ভাবে ভোট চাইছেন শাটল ট্রেন, ষোলশহর রেলস্টেশন, মেস-কটেজ ও বিভিন্ন আবাসনে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও চলছে তুমুল প্রচারণা।

শিক্ষার্থীরা জানান, অনাবাসিকদের মূল সমস্যা হলো যাতায়াত, সেশনজট, নিরাপত্তা ও টিউশন ফি। অন্যদিকে, আবাসিকদের সমস্যা হলো সিট বণ্টন, খাবারের মান ও হল-রাজনীতির প্রভাব।

প্রার্থীরাও এসব দাবি শোনার পাশাপাশি তাদের ইশতেহার শিক্ষার্থীদের সামনে তুলে ধরছেন। বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদপ্রার্থী চৌধুরী তাসনীম জাহান শ্রাবণ কালবেলাকে বলেন, আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরু হতেই ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যায়। তাই আমরা এখন অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের কাছে যাচ্ছি। শাটল ট্রেন থেকে শুরু করে স্টেশন ও মেস-কটেজ সব জায়গায় আমরা প্রচার চালাচ্ছি। ভোটারদের কাছ থেকে আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি।

চাকসু নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক এ কে এম আরিফুল হক সিদ্দিকী কালবেলাকে বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে পাঁচটি অনুষদ ভবনে ভোটকেন্দ্র স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ব্যালট পেপারে যতটা পাতা থাকবে, ততটা ব্যালট বক্স থাকবে। প্রার্থী ও ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর আগামী সোমবার এসব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে।

চাকসু নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, ৩৫ বছর পর হতে যাওয়া এই নির্বাচনকে আমরা বিতর্কমুক্ত রাখতে চাই। শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। ব্যালট পেপার ছাপানো থেকে শুরু করে ভোটকক্ষে সিসিটিভি স্থাপন— সবকিছুই কমিশনের সরাসরি তত্ত্বাবধানে হচ্ছে।

রনির মন্তব্য ক্ষমতা ধরে রাখতে আ. লীগ ভয় ব্যবহার করছে

Janatar Voice জনতার ভয়েস খবর পেতে ফেসবুক পেইজ ফলো করুন 


No comments

Powered by Blogger.