বিএনপি কৃষকদের হাত আরও শক্তিশালী করবে : তারেক রহমান
খাদ্য উৎপাদনের নেপথ্যের নায়ক—বাংলাদেশের কৃষকদের প্রতি নতুন করে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি বলেছেন, “বিএনপি সেই হাতগুলোকে আরও শক্তিশালী করবে, যাতে তারাই আগামী বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে।”
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে দেওয়া এক বাণীতে তিনি এই প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন।
তারেক রহমান বলেন, বাংলাদেশের প্রতিটি শস্যকণায়, প্রতিটি ধানগাছের সবুজে লুকিয়ে আছে কৃষকের ঘাম, ত্যাগ আর দৃঢ়তা। বগুড়ার উর্বর মাঠ থেকে বরিশালের ভাসমান বাগান পর্যন্ত তাদের শ্রমই এই জাতির মেরুদণ্ড। বিএনপি বিশ্বাস করে—খাদ্য নিরাপত্তা শুধু সরকারের দায়িত্ব নয়, এটি হতে হবে কৃষক, উদ্যোক্তা, গবেষক ও সাধারণ মানুষের পারস্পরিক অংশীদারিত্বের ফল।
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ একসময় দুর্ভিক্ষের অন্ধকার থেকে উঠে এসেছিল। তার দিকনির্দেশনায় সেচব্যবস্থা, খাল পুনঃখনন ও ফসল বৈচিত্র্যকরণে কৃষিতে আত্মনির্ভরতার যুগ শুরু হয়। পরে প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সেই উত্তরাধিকার ধরে রেখে সার ভর্তুকি, গ্রামীণ বিদ্যুতায়ন ও ‘কাজের বিনিময়ে খাদ্য’ কর্মসূচি চালু করে কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করেন।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে, তারেক রহমান বলেন, খাদ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানির সংকট কৃষি খাতের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশ এখন ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিচ্ছে, যাদের জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। বিএনপি মনে করে, এই বাস্তবতা মোকাবিলায় সরকার, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও দাতা দেশগুলোকে যৌথভাবে এগিয়ে আসতে হবে, যাতে মানবিক সহায়তা টেকসই সমাধানে পরিণত হয়।
তিনি বলেন, “গাজা, সুদান, ইয়েমেনের মতো জায়গায় যেমন খাদ্য নিরাপত্তা আজ বৈশ্বিক ইস্যু, বাংলাদেশেও আমাদের নীতিতে মানবিকতা ও উদ্ভাবন দুটোই থাকতে হবে।”
বিএনপির প্রস্তাবিত খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি পুনর্গঠন পরিকল্পনায় থাকছে—
- ফার্মার্স কার্ড উদ্যোগ: প্রতিটি কৃষক পাবেন একটি ডিজিটাল কার্ড, যার মাধ্যমে সরাসরি সরকারি ভর্তুকি, ফসল বিমা, ঋণ ও ক্রয় সুবিধা পাবেন। এতে মধ্যস্বত্বভোগীর শোষণ কমবে এবং কৃষক জাতীয় অর্থনীতির মূল অংশীদার হবেন।
- জলবায়ু সহনশীল কৃষি ও পানি নিরাপত্তা: নদী-খাল পুনরুদ্ধার, সম্প্রদায়ভিত্তিক সেচব্যবস্থা এবং তিস্তা ও গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণের মাধ্যমে কৃষির পানির নিশ্চয়তা দেওয়া হবে।
- পানি সংরক্ষণমুখী চাষাবাদ: ‘অল্টারনেট ওয়েটিং অ্যান্ড ড্রাইং’ প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে পানির অপচয় রোধ করে কার্বন নির্গমন কমানো হবে, যা থেকে দেশ কার্বন ক্রেডিট আয় করতে পারবে।
- পুষ্টি ও মানব উন্নয়ন: নারীদের গৃহপ্রধান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ‘ফ্যামিলি কার্ড’ ও ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’ কর্মসূচি চালু করা হবে, যাতে তারা খাদ্য নিরাপত্তা ও পারিবারিক কল্যাণের নেতৃত্ব নিতে পারেন।
- কৃষিভিত্তিক অর্থনৈতিক শক্তি: কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে অন্তত ১৩ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। তরুণদের কৃষিতে ফিরিয়ে আনতে মেকানাইজেশন, ড্রোন প্রযুক্তি ও স্টার্টআপ ফান্ড চালু হবে।
- পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন: বর্জ্য থেকে জ্বালানি উৎপাদন, রিসাইক্লিং হাব ও বায়োগ্যাস প্রকল্পের মাধ্যমে টেকসই ‘সার্কুলার ইকোনমি’ গড়ে তোলা হবে।
তারেক রহমান বলেন, “বাংলাদেশ প্রমাণ করতে পারে—কৃষকের মর্যাদা, খাদ্য নিরাপত্তা ও টেকসই উন্নয়ন কোনো স্বপ্ন নয়, বরং বাস্তবায়নযোগ্য লক্ষ্য। আমাদের শক্তি সেই হাতেই, যারা মাটি চাষ করে।”
তিনি আবারও পুনর্ব্যক্ত করেন—বিএনপি কৃষকদের হাতকে আরও শক্তিশালী করবে, কারণ তাদের হাতেই নিহিত আগামী বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।
আরো পড়ুন: নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের পথ আরও সুগম হবে : মির্জা ফখরুল


No comments