নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের কারণ সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো : নূরুল কবীর

 

"নির্বাচন ও রাজনীতি নিয়ে জনমনে সংশয় সরকারের আচরণেই সৃষ্টি হয়েছে" — নূরুল কবীর

নির্বাচন ও বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে জনমনে যে সংশয় ও অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, তা মূলত সরকারের কর্মকাণ্ড ও রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতার কারণেই—এমন মন্তব্য করেছেন নিউ এজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীর।

মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাতে একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশো অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে তিনি বলেন, “নির্বাচনের মূল দায়িত্ব সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর। জনগণ শুধু ভোট দেয়। অথচ এই নির্বাচনী প্রক্রিয়ার নীতিমালা নির্ধারণে জনগণের কোনো ভূমিকা থাকে না।”

তিনি বলেন, “আগামী বছরের মধ্য ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নির্ধারণ করা হয়েছে রাজনৈতিক চাপের কারণে, বিশেষ করে বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী দলের দাবির মুখে। কিন্তু এই সংকটের মূল উৎপত্তি গত বছরের ৫ থেকে ৮ আগস্টের মধ্যে, গণতন্ত্রপন্থী ছাত্রদের গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচার পতনের সময় থেকেই।”

নূরুল কবীর মনে করেন, সেই সময় অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক রূপান্তরের দিকে যাত্রা শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই সরকার কতদিন থাকবে এবং কী করবে—তার কোনও পরিষ্কার রূপরেখা তখন নির্ধারণ করা হয়নি। “গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনও সরকার অনির্দিষ্টকালের জন্য থাকতে পারে না,”—তিনি বলেন।

তিনি আরও বলেন, “তৎকালীন সরকার (ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন) মূলত তিনটি কাজ করার কথা ছিল— ১) গুলি করে মানুষ হত্যার বিচার শুরু করা, ২) রাজনৈতিক ব্যবস্থায় সংস্কার আনা, এবং ৩) নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। কিন্তু এসবের কিছুই সঠিকভাবে হয়নি।”

নূরুল কবীর জানান, সরকার গঠনের পর প্রথম কয়েক মাসেই মন্ত্রীদের আচরণে মনে হয়েছিল তারা চার-পাঁচ বছরের জন্য ক্ষমতায় এসেছে। তাদের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনার ঘাটতি ছিল।

তিনি বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোও যখন দেখল সরকার সংস্কার প্রক্রিয়ায় গা করছে না, তখন তাদের মধ্যেও নির্বাচন চেয়ে আন্দোলন শুরু হয়। সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকেও ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলা হয়।”

সরকার কমিশন গঠন করলেও সেই কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি বলেও তিনি অভিযোগ করেন। “সরকারের নিজস্ব কোনও সংস্কার কর্মসূচি ছিল না। বরং তারা দায় চাপিয়ে দিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর,”—মন্তব্য করেন নূরুল কবীর।

তিনি বলেন, “আজ রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরের ওপর চাপ প্রয়োগ করে নিজেদের কর্মসূচি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। এতে নির্বাচন নয়, বরং অবিশ্বাস ও সংশয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর নিজস্ব আদর্শ থাকলেও তারা যেন একে অপরকে বাধ্য করতে চাচ্ছে—এটি গ্রহণযোগ্য নয়।”

পরিশেষে, তিনি বলেন, “সরকারের মধ্যে গণতান্ত্রিক অঙ্গীকারের অভাব স্পষ্ট। যারা এই সরকারে আছেন, তাদের অনেকে এনজিও সংশ্লিষ্ট, যাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নেই। ফলে এক বছরের বেশি সময় পার হলেও রক্তপাত, বিচারহীনতা আর দুর্বল শাসনব্যবস্থার মধ্যে রাষ্ট্র পরিচালনায় কোনো পরিবর্তন আসেনি।”

No comments

Powered by Blogger.